শাসন বিভাগের কাজ কি ?

শাসনবিভাগের প্রধান কাজ হল রাষ্ট্রের মধ্যে আইনকে প্রয়োগ করা, নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, স্থায়ী কর্মচারীদের নিযুক্ত করা প্রভৃতি। ব্যাপক অর্থে শাসন-বিভাগকে আভ্যন্তরীণ শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়। এই কার্য সম্পাদনের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে শাসনবিভাগের স্বরাষ্ট্র দপ্তর (Home Department)-এর উপর।

শাসন বিভাগের প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপ :

(১) অভ্যন্তরীণ শাসন পরিচালনা বা স্বরাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ: শাসন বিভাগের প্রধান কাজ হল দেশের অভ্যন্তরে যাতে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ রাখা। শাসন বিভাগের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের উপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে। আইনসভা-প্রণীত। আইন কার্যকর এবং আইন অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করার দায়িত্ব শাসন বিভাগের। শাসন বিভাগের প্রধান কাজই হল রাষ্ট্রের মধ্যে আইনের প্রয়ােগ করা, বিভিন্ন কর্মচারী নিয়োগ করা এবং সরকারি কর্মচারীদের জন্য নিয়মকানুন রচনা করা। ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে, শাসন বিভাগকে অভ্যন্তরীণ শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়।

(২) পররাষ্ট্র ও কূটনীতি সংক্রান্ত কাজ: বর্তমান পৃথিবীতে কোনাে রাষ্ট্রই নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে দাবি করতে পারে না। তাই বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সংযােগ, সম্ভব, সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি প্রেরণ, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি क সম্পাদক, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মতাে আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক আরােপিত দায়িত্ব পালন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কাজ শাসন বিভাগকে সম্পন্ন করতে হয়। এই কাজগুলি পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় বলে এই ধরনের কাজকে পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ বলা হয়।

(৩) প্রতিরক্ষা বা সামরিক কার্যাবলি: দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, বহিঃশত্রু আক্রমণ থেকে শুরু করে দেশ রক্ষার দায়িত্ব শাসন বিভাগের। যুদ্ধের প্রয়ােজনে সৈন্যবাহিনী গঠন, যুদ্ধ পরিচালনা, সেনাপতি নিয়ােগ প্রভৃতি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কাজ শাসন বিভাগের মাধ্যমেই সম্পাদিত হয়। শাসন বিভাগের প্রধানই হলেন সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক, এর জন্য তিনিই সৈন্যাধ্যক্ষগণকে নিয়ােগ ও পদচ্যুত করে থাকেন। তিনিই যুদ্ধ ঘােষণা ও পরিচালনা করে থাকেন।

(৪) আইন সংক্রান্ত কাজ: শাসন বিভাগের আইন সংক্রান্ত কার্যাবলি সরকারের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল, তত্ত্বগতভাবে আইন প্রণয়নের যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী হল আইনসভা, কিন্তু বাস্তবে শাসন বিভাগ বহু গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে থাকে। শাসন বিভাগ প্রয়ােজনে জরুরি আইন বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে। কোনাে কোনাে রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের প্রধান (রাষ্ট্রপতি) আইনসভা-প্রণীত বিলে ভেটো ক্ষমতা প্রয়ােগ পর্যন্ত করতে পারেন।

এই তথ্য অনুযায়ী বােঝা যায় যে, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রত্যক্ষভাবে আইন বিভাগের উপর তার প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। বর্তমানে শাসন বিভাগ আইনের খুঁটিনাটি বা উপ-আইন (by-law) প্রণয়ন করে মূল আইনের ফাঁক গুলি পূরণ করে থাকে। এই পদ্ধতিটিকে অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন’ (Delegated legislation) বলা হয়।

(৫) অর্থ সংক্রান্ত কাজ: অর্থ সংক্রান্ত কাজ হল শাসন বিভাগের আর-এক অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অর্থ সংক্রান্ত কাজ অর্থাৎ দেশের জনগণের কল্যাণসাধনের ক্ষেত্রে কত টাকা ব্যয় করা হবে কিংবা দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কোন্ খাতে কত খরচ হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব শাসন বিভাগের উপর ন্যস্ত থাকে। এ ছাড়া কর ধার্য ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে আইন সভার অনুমােদন প্রয়ােজন হলেও শাসন বিভাগই সেই উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। শাসন বিভাগের এই কাজ যে দপ্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, তাকে অর্থ দপ্তর বলা হয়। মূলত, শাসন বিভাগ সরকারি অর্থ সংগ্রহ এবং ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। সরকারের এই বিভাগের মাধ্যমে সরকারি অর্থ হিসাব পরীক্ষা করা, সরকারের আনুমানিক আয়-ব্যয়ের হিসাব অর্থাৎ বাজেট তৈরি করা হয়ে থাকে।

(৬) বিচার বিভাগীয় কাজ: সাধারণত বিচার সংক্রান্ত কাজ বিচার। বিভাগ সম্পাদন করে থাকে। তবে আধুনিক রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের হাতেও কিছু বিচার সংক্রান্ত কাজ ন্যস্ত করা হয়েছে। যেমন, বিচারপতিদের নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা ভোগ করে শাসন বিভাগ। বিচার বিভাগ কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোনাে ব্যক্তির দণ্ড মকুব করার ক্ষমতা শাসন বিভাগের (যেমন- ভারতের রাষ্ট্রপতি) আছে। শাসন বিভাগের বিচার সংক্রান্ত কাজ প্রকৃতপক্ষে আদালতের কার্য সম্পাদনের মতাে একই ভূমিকা পালন করে না। শাসন বিভাগের বিচার সংক্রান্ত কাজকে আধা-বিচার বিভাগীয় (Quasi Judicial ) কাজ বলা হয়। এই কাজগুলি ছাড়াও শাসন বিভাগ কর নির্ধারণ, নিয়োগ, পদোন্নতি, পদচ্যুতি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তির নিষ্পত্তি পর্যন্ত করতে পারে।

(৭) নীতি নির্ধারণ ও কর্মসূচি সংক্রান্ত কাজ: শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করা এবং তার ভিত্তিতে প্রয়ােজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রের নীতি ও কর্মসূচিকে বাস্তবে রূপদান করার দায়িত্ব শাসন বিভাগের উপরই ন্যস্ত থাকে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনার জন্যও সুনির্দিষ্ট নীতি থাকে, যা সরকারের শাসন বিভাগ নির্ধারণ করে থাকে।

(৮) জনকল্যাণ সংক্রান্ত কর্মসূচি বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিটি রাষ্ট্র জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণসাধনে নিয়ােজিত থাকে। এর ফলস্বরূপ বলা যায় যে, শাসন বিভাগের কার্যক্ষেত্রের পরিধি সুবিস্তৃত হয়েছে। বলাবাহুল্য, শাসন বিভাগ রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি জনকল্যাণমূলক (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অন্ন-বস্ত্র, পরিবহণ, যােগাযােগ, শিল্প-বাণিজ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, পণ্য পরিবহণ, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ডাক, বিমান ও রেল পরিসেবা ইত্যাদি) কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। শাসন বিভাগকে কোনাে কোন দ্রব্যের উৎপাদন ও বণ্টনের দায়িত্ব পর্যন্ত গ্রহণ করতে হয়।

(৯) নিয়ােগ সংক্রান্ত কর্মসূচি: রাষ্ট্রের অন্তর্গত বিভিন্ন সরকারি কর্মীদের নিয়ােগ, বদলি ও পদচ্যুতির মতাে কার্যকর ক্ষমতা গুলি শাসন বিভাগের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। বলা যেতে পারে যে, উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকদের নিয়ােগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করার একমাত্র অধিকার বা দায়িত্ব ভােগ করে থাকে শাসন বিভাগ।

(১০) জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত কর্মসূচি: সংবিধানে উল্লিখিত জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা গুলি শাসন বিভাগই ভােগ করে থাকে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সংকট কালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সেই ব্যবস্থার দায়িত্ব শাসন বিভাগের উপরই ন্যস্ত রয়েছে।

FacebookX
Najrin Akter
Najrin Akter

আমি নাজরিন আক্তার, সাধারণ ও অজানা বিষয়ে জানার অগ্রহী ! এখানে আমি এই গুলা নিয়ে নিয়মিত লেখা লেখি করতেছি ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *