বিশ্ব ইতিহাসের বিভিন্ন সংবিধানের মধ্যে কিছু সংবিধান অনুপ্রেরণার এক অনন্য উৎস। এমন একটি সংবিধান যা “The Mother of the Constitution” নামে খ্যাত, তা হলো ম্যাগনা কার্টা (Magna Carta)।
মেঘনাকার্টকে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের বাইবেল বলে অভিহিত করা হয় !
ম্যাগনা কার্টা: সংক্ষিপ্ত পরিচয়
ম্যাগনা কার্টা, যা লাতিন ভাষায় “দ্য গ্রেট চার্টার” নামে পরিচিত, ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা জন এবং তার বারনেরা (প্রভাবশালী ভূমির মালিকগণ) মধ্যে একটি চুক্তি ছিল। এটি ব্যক্তির অধিকার, আইন শাসন এবং রাজতন্ত্রের সীমাবদ্ধতার ভিত্তি স্থাপন করে। যদিও এটি প্রাথমিকভাবে রাজা ও বারনের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে তৈরি হয়েছিল, ম্যাগনা কার্টা পরবর্তী সময়ে অনেক দেশের সংবিধানের ভিত্তি স্থাপনে ভূমিকা রাখে।
কেন এটি “The Mother of the Constitution”?
১. আইনের শাসনের ধারণা প্রবর্তন: ম্যাগনা কার্টা প্রথমবারের মতো রাজা বা শাসকের ক্ষমতার উপর আইনের আধিপত্য স্থাপন করেছিল।
২. ব্যক্তির অধিকার সংরক্ষণ: এটি অনেক আধুনিক সংবিধানের মতো মৌলিক মানবাধিকারের ধারণা দিয়েছে।
৩. অনুপ্রেরণার উৎস:
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান (1787): গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ভিত্তি ম্যাগনা কার্টা থেকে অনুপ্রাণিত।
- ফরাসি বিপ্লবের “ডিক্লারেশন অব রাইটস”: এটি ম্যাগনা কার্টার ধারণা নিয়ে জনগণের অধিকারের ধারণাকে আরও গভীর করেছে।
- ভারতীয় সংবিধান (1950): আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের স্পষ্ট প্রতিফলন ম্যাগনা কার্টার উদাহরণকে অনুসরণ করেছে।
ম্যাগনা কার্টার মূল তত্ত্ব
ম্যাগনা কার্টা ৬৩টি ধারা সম্বলিত ছিল, যার মধ্যে প্রধানতম ধারাগুলি ছিল:
- স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ধারণা।
- রাজা কর্তৃক অযৌক্তিক কর আরোপ বন্ধ করা।
- সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা।
আধুনিক সংবিধানের উপর প্রভাব
ম্যাগনা কার্টা আইন শাসন, ক্ষমতার ভারসাম্য, এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে সংবিধান প্রণয়নের ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
উপসংহার
ম্যাগনা কার্টা শুধু একটি ঐতিহাসিক দলিল নয়, বরং এটি একটি নতুন সভ্যতার ধারণা গড়ে তুলেছে। এ কারণেই এটি ইতিহাসে “The Mother of the Constitution” হিসেবে পরিচিত। সংবিধানের এই আদর্শ আজও গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মৌলিক কাঠামোতে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।