কেরোসিন কোন ভাষার শব্দ? জানুন এর পেছনের মজার ইতিহাস

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত অনেক পরিচিত শব্দের পেছনেই লুকিয়ে থাকে একটি চমকপ্রদ ইতিহাস। ‘কেরোসিন’ এমনই একটি শব্দ। রান্না থেকে শুরু করে আলো জ্বালানো পর্যন্ত, একসময় বাঙালির জীবনে কেরোসিনের ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, এই ‘কেরোসিন’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?

সরাসরি বলতে গেলে, ‘কেরোসিন’ (Kerosene) শব্দটি একটি ইংরেজি শব্দ, তবে এর মূল উৎস হলো গ্রিক ভাষা। চলুন, এই শব্দটির উৎস এবং এর নামকরণের পেছনের মজার ইতিহাস বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

শব্দটির উৎস: গ্রিক থেকে ইংরেজি

‘কেরোসিন’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি বা উৎস বুঝতে হলে আমাদের একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।

  • গ্রিক মূল: শব্দটির মূলে রয়েছে গ্রিক শব্দ ‘Keros’ (গ্রিক: κηρός)। গ্রিক ভাষায় ‘কেরোস’ শব্দের অর্থ হলো ‘মোম’ (Wax)
  • ইংরেজি: উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রসায়নবিদরা বিভিন্ন হাইড্রোকার্বন যৌগের নামের শেষে ‘-ene’ প্রত্যয়টি ব্যবহার করতে শুরু করেন (যেমন: Benzene, Naphthalene)। গ্রিক শব্দ ‘Keros’ (মোম) এর সাথে এই ‘-ene’ প্রত্যয়টি যুক্ত করে Kerosene শব্দটি তৈরি করা হয়।

সুতরাং, শব্দটির গঠন হলো: Keros (মোম) + ene = Kerosene

কে এই নামটি রেখেছিলেন?

কেরোসিন তেল এবং এর নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত একজন ব্যক্তির সাথে। তিনি হলেন কানাডিয়ান ভূতত্ত্ববিদ এবং চিকিৎসক আব্রাহাম গেসনার (Abraham Gesner)

১৮৫৪ সালে আব্রাহাম গেসনার কয়লা থেকে প্রাপ্ত এক ধরনের বিশেষ তেলকে পরিশ্রুত করে একটি নতুন জ্বালানি আবিষ্কার করেন। যেহেতু এই জ্বালানিটি মোমজাতীয় পদার্থ (যেমন: বিটুমেন এবং শিলা তেল) থেকে তৈরি করা হয়েছিল, তাই তিনি গ্রিক শব্দ ‘Keros’ (মোম) এর উপর ভিত্তি করে এই নতুন জ্বালানির নাম রাখেন ‘Kerosene’ এবং নামটি ট্রেডমার্ক হিসেবে নিবন্ধন করেন।

বাংলা ভাষায় ‘কেরোসিন’

বাংলা ভাষায় ‘কেরোসিন’ শব্দটি সরাসরি ইংরেজি ভাষা থেকে গৃহীত একটি বিদেশী শব্দ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান অনুযায়ী, ‘কেরোসিন’ একটি ইংরেজি শব্দ হিসেবেই তালিকাভুক্ত। সময়ের সাথে সাথে শব্দটি বাংলা ভাষায় এতটাই মিশে গেছে যে, এটিকে এখন আর বিদেশী বলে মনেই হয় না।

সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQ)

প্রশ্ন: কেরোসিন শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
উত্তর: কেরোসিন মূলত একটি ইংরেজি শব্দ, যার মূল উৎস গ্রিক শব্দ ‘কেরোস’ (Keros), যার অর্থ মোম।

প্রশ্ন: কেরোসিন শব্দের মূল অর্থ কী?
উত্তর: কেরোসিন শব্দের মূল বা আক্ষরিক অর্থ হলো ‘মোম থেকে প্রাপ্ত’ বা মোমজাতীয় পদার্থ।

প্রশ্ন: কেরোসিন নামটি কে দিয়েছিলেন?
উত্তর: কানাডিয়ান বিজ্ঞানী আব্রাহাম গেসনার ১৮৫৪ সালে এই নামটি দেন এবং ট্রেডমার্ক হিসেবে নিবন্ধন করেন।

উপসংহার

সুতরাং, আমরা জানতে পারলাম যে আমাদের অতি পরিচিত ‘কেরোসিন’ শব্দটি আসলে ইংরেজি হলেও এর শেকড় রয়েছে প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়। একটি সাধারণ জ্বালানির নামের পেছনেও যে এমন একটি আন্তর্জাতিক ইতিহাস থাকতে পারে, তা সত্যিই চমকপ্রদ।

FacebookX
kamruz
kamruz

সময় পেলেই মানেকীতে সাম্প্রতিক ও সাধারণ বিষয়ে লেখা লিখি করি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *