“ফিদাকা আবি ওয়া উম্মি ইয়া রাসুলুল্লাহ” – এই বাক্যবন্ধটি মুসলিম উম্মাহর কাছে অতি পরিচিত এবং পবিত্র। এর আক্ষরিক অর্থ হলো, “হে আল্লাহর রাসূল, আমার বাবা-মা আপনার জন্য কুরবান হোক।” কিন্তু এর গভীরতর অর্থ অনেক ব্যাপক। এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসা, গভীর শ্রদ্ধা এবং অপরিসীম আনুগত্যের প্রকাশ।
হাদিসের আলোকে এর তাৎপর্য
এই বাক্যটি সরাসরি কোনো হাদিসে উল্লেখ না থাকলেও, এর মর্মবাণীকে সমর্থন করে এমন হাদিস রয়েছে। যেমন, সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই।”
সহীহ বুখারী হাদীস :১৫
এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে বলে দেয় যে, একজন সত্যিকারের মুমিনের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা সকল সম্পর্কের চেয়ে উচ্চতর হবে। এমনকি পিতা-মাতার প্রতি ভালোবাসার চেয়েও।
বাক্যটির প্রতিটি শব্দের গভীরতা
- ফিদাকা: এর অর্থ “কুরবানি”। এটি এমন এক ত্যাগের প্রকাশ যেখানে একজন ব্যক্তি তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।
- আবি ওয়া উম্মি: অর্থাৎ “আমার বাবা ও মা”। বাবা-মা একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাদের প্রতি ভালোবাসা ও ত্যাগ স্বাভাবিক।
- ইয়া রাসুলুল্লাহ: অর্থাৎ “হে আল্লাহর রাসূল!”। এটি রাসূল (সা.)-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ।
বাক্যটির ব্যবহার ও প্রাসঙ্গিকতা
সাহাবায়ে কেরামগণ প্রায়ই এই বাক্যটি ব্যবহার করে রাসূল (সা.)-এর প্রতি তাদের ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রকাশ করতেন। আজও মুসলিমগণ বিভিন্ন প্রসঙ্গে এই বাক্যটি ব্যবহার করেন, বিশেষত যখন তারা রাসূল (সা.)-এর প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে চান।
উপসংহার
“ফিদাকা আবি ওয়া উম্মি ইয়া রাসুলুল্লাহ” কেবল একটি বাক্য নয়, এটি মুসলিম হৃদয়ের এক অন্তরঙ্গ আবেগের প্রকাশ। এটি রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের এক নিদর্শন। হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি, একজন সত্যিকারের মুমিনের জন্য রাসূল (সা.)-এর স্থান সবার উপরে।