রমজানের রোজা রাখা যেমন ফরজ তেমনি রোজার জন্য নিয়ত করাও ফরজ। রোজা বা সিয়াম মুসলমানদের জন্য তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তিনি বলেন, ‘তোমারদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে- যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
প্রত্যেক সবল মুসলিম নর-নারীর জন্য রমজানের রোজা পালন করা ফরজ মানে বাধতামূলক। রমজানের রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত না করলে রোজা শুদ্ধ হবে না। নীচে রোজার নিয়ত আরবি এবং বাংলা দুই ভাবেই দেয়া হয়েছে।
রোজার যে নিয়ত প্রচলিত
বাংলাদেশে রোজার একটি আরবি নিয়ত প্রসিদ্ধ— যেটা মানুষ মুখে পড়ে থাকেন। তবে এটি হাদিস ও ফিকাহের কোনো কিতাবে বর্ণিত হয়নি। তবে কেউ চাইলে পড়তে পারেন। (তবে জেনে রাখা উচিত যে, নিয়ত পড়ার চেয়ে নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ।)
রোজার নিয়ত আরবি
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ
বাংলা উচ্চারন: নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
রোজার নিয়ত ছবিসহ আরবি ও বাংলা উচ্চারন রোজার নিয়ত ছবি
রোজার নিয়ত কী ও কীভাবে
রোজা পালনে সাহরি ও ইফতার গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি রোজার নিয়তও জরুরি। তবে এই ক্ষেত্রে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সাহরি খাওয়াটাই রোজার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত।
বস্তুত মনের ইচ্ছাই হলো- নিয়ত। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে। (সূত্র : আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ : ১/১৭৬; রাদ্দুল মুহতার : ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫)
নফল রোজার নিয়ত
নিয়ত মানে হচ্ছে আপনার মনের ইচ্ছাটা। ফরয, নফল কোন রোযার জন্যই মুখে মুখে নিয়ত করতে হয় না। নিয়ত মনে মনে করতে হয়। আর এটা মানুষের মনে তখনই হয়ে যায় যখন মানুষ কোন কাজের ইচ্ছা পোষণ করেন। যেমন : ধরুন আপনি আগামীকাল দশটার বাসে ঢাকায় যাবেন। এটা বাস্তবায়ন করার জন্য কি আপনাকে সেটা বিশেষ বাক্যের মাধ্যমে নিজের মনকে জানাতে হয়? কখনই না।
অনুরূপভাবে রোযার জন্য ” নাওয়াইতু আন আসুমা গাদান ” ইত্যাদি কোন আনুষ্ঠানিক নিয়তের প্রয়োজন নেই । সচেতনভাবে সজ্ঞানে কাজ করলে নিয়ত আপনা আপনিই হয়ে যায়।
আপনি বিরিয়ানি খেতে চাইলে কিন্তু কখনো বলেন না, “আপনি এখন প্লেটে নিয়ে আরাম করে বসে গরম গরম কাচ্চি বিরিয়ানি খাব, এই আমি শুরু করলাম! গপ গপ গপ…”, বরং আপনি কিনে আনেন কিংবা রান্না করে খান। ওইযে শুরুতে আপনার বিরিয়ানি খাবার ইচ্ছা মনের মধ্যে জেগেছিল, এই জিনিসটার নামই হল নিয়ত বা ইচ্ছা।
নফল রোজার নিয়ত বাংলায়
নিয়ত মানে হচ্ছে আপনার মনের ইচ্ছাটা। আপনি বিরিয়ানি খেতে চাইলে কিন্তু কখনো বলেন না, “আপনি এখন প্লেটে নিয়ে আরাম করে বসে গরম গরম কাচ্চি বিরিয়ানি খাব, এই আমি শুরু করলাম! গপ গপ গপ…”, বরং আপনি কিনে আনেন কিংবা রান্না করে খান। ওইযে শুরুতে আপনার বিরিয়ানি খাবার ইচ্ছা মনের মধ্যে জেগেছিল, এই জিনিসটার নামই হল নিয়ত বা ইচ্ছা।
এখন চলুন দেখি ইবাদতের জন্য নিয়ত কেন গুরুত্বপুর্ণ?
আপনি কেন রোজা রাখছেন সেটাই আপনার নিয়ত বা উদ্দেশ্য। আমরা, মুসলিমরা রোজা রাখি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আবার অনেকে রাখতে পারে লোক দেখাতে কিংবা ওজন কমাতে। আপনি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিলেই (আপনার হৃদয়ে) আপনার রোজার নিয়ত(বিশুদ্ধ) হয়ে গেল। আল্লাহ তায়ালা এটাই চান যেন আমরা আমাদের সকল ইবাদত শুধুমাত্র তার জন্যই করি। মনের মধ্যে যেকোন ইবাদতের জন্য এই ইচ্ছা রাখাটা ফরজ যে “আমার সব ইবাদত হচ্ছে একান্তই আল্লাহর জন্য”।
রাতে যদি “আমি তাকওয়া অর্জন করার জন্য/রাসুল সা. এর সুন্নাহ পালনের জন্য কালকে রোজা রাখব ইনশা আল্লাহ” এমন চিন্তা করে ঘুমান তারপর উঠে সাহরি খান তবে এই জিনিসটাই হল আপনার বিশুদ্ধ নিয়ত (যেটা আল্লাহ চান, যা সকল ইবাদতের জন্য ফরজ)। রাতের ঐ চিন্তা আর সাহরি খাবার মাধ্যমেই আপনি ‘নিয়ত করা ফরজ’- অংশটি পূরন করে ফেললেন। একি ভাবে সালাত আদায়ের জন্য যদি মসজিদে যান, ওজু করেন, শুধুমাত্র আল্লাহর ফরজ বিধান পালনের জন্য সালাত শুরু করেন তাহলে আপনার নিয়ত হয়ে গেল। এর জন্য মুখে কোন আরবি বাক্য আলাদাভাবে উচ্চারণ করতে হয় না।
আর মনে মনে এই সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছা পোষণ করার জন্যও কোন আরবি বাক্য শেখার দরকার নেই। আপনি আপনার সব চিন্তা যেমন বাংলা ভাষায়ই করেন মনের ভেতর, ঠিক একইভাবে এই রোজা কিংবা সালাতের চিন্তাও বাংলা ভাষায় করবেন!
আবার আপনি যদি ওজন কমানো কিংবা লোকে ভালো বলবে এইরকম চিন্তা নিয়ে রোজা রাখেন, তবে আপনার নিয়ত কিন্তু করা হয়ে যাবে। তবে সেটি বিশুদ্ধ নিয়ত নয়। আর এমন নিয়ত করলে কোন ইবাদতই কবুল হবে না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ইসলামে নিয়ত আসলে কি।
মুখে উচ্চারন করে আরবি নিয়ত না বললে ছাড়া রোজা/নামাজ হবে না এমনটি ভাবলে তা বিদয়াত হিসেবে গণ্য হবে।
নফল রোজার নিয়ত আরবি
নিয়ত মনে মনে করতে হয়। আর এটা মানুষের মনে তখনই হয়ে যায় যখন মানুষ কোন কাজের ইচ্ছা পোষণ করেন। যেমন : ধরুন আপনি আগামীকাল দশটার বাসে ঢাকায় যাবেন। এটা বাস্তবায়ন করার জন্য কি আপনাকে সেটা বিশেষ বাক্যের মাধ্যমে নিজের মনকে জানাতে হয়? কখনই না।
অনুরূপভাবে রোযার জন্য ” নাওয়াইতু আন আসুমা গাদান ” ইত্যাদি কোন আনুষ্ঠানিক নিয়তের প্রয়োজন নেই । সচেতনভাবে সজ্ঞানে কাজ করলে নিয়ত আপনা আপনিই হয়ে যায়।
নফল রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
ফরয, নফল কোন রোযার জন্যই মুখে মুখে নিয়ত করতে হয় না।
শবে মেরাজ, শবে বরাত ইত্যাদি নফল রোজার নিয়ত
প্রথমত শবে মেরাজ বা শবে বরাতের আলাদা নির্দিষ্ট কোনো নফল রোজা নেই।
আর দ্বিতীয়ত যেকোনো কাজের পূর্বে কোন কাজটি করছেন তা সঠিকভাবে মন থেকে নির্ধারণ করে নিলেই নিয়তের কাজ হয়ে যায়। স্পেসিফিক ভাবে কিছু পড়া বা বলার প্রয়োজনীয়তা নেই। আপনি নফল রোজা রাখবেন এটা যেহেতু আপনার কাছে নির্দিষ্ট তাই আপনার রোজার নিয়ত এখানেই হয়ে গেছে নিয়তের জন্য আলাদাভাবে আর কিছু করতে হবে না।
রোজার নিয়ত করা কি ফরজ?
হ্যাঁ, রোজার নিয়ত করা ফরজ!
রোজার নিয়ত কখন করতে হয়?
ফরজ রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম। (সুনানে আবি দাউদ : ১/৩৩৩, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)।
রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে। (সহিহ বোখারি : ২০০৭, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২২৯)।
পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ, প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। (সহিহ বোখারি : ১/২, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৯৫)।
রাতে রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না। (সুরা বাকারা : ১৮৭)।