ডিমেনশিয়া কি?

ডিমেনশিয়া হলো একটি জটিল স্নায়ুবিক অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। এটি কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, বরং মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের কারণে সৃষ্ট উপসর্গের একটি সমষ্টি। ডিমেনশিয়া সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, তবে এটি বয়সের স্বাভাবিক পরিণতি নয়।


ডিমেনশিয়ার লক্ষণ:

ডিমেনশিয়ার লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও খারাপ হয়। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

1. স্মৃতিভ্রংশ:

  • সাম্প্রতিক ঘটনা বা তথ্য ভুলে যাওয়া
  • পূর্বে শিখে নেওয়া দক্ষতা বা তথ্য মনে রাখতে সমস্যা

2. ভাষার সমস্যা:

  • কথা বলতে বা শব্দ খুঁজে পেতে কষ্ট হওয়া
  • বাক্যগঠন বা কথোপকথন বজায় রাখতে সমস্যা

3. পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমস্যা:

  • দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করতে অসুবিধা
  • হিসাব করা বা পরিকল্পনা করতে অক্ষমতা

4. মেজাজ ও আচরণের পরিবর্তন:

  • হতাশা, উদ্বেগ বা আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন
  • আগ্রহ হারানো বা উদাসীনতা

5. দৃষ্টিভ্রম ও বিভ্রান্তি:

  • সময় ও স্থান সম্পর্কে ভুল বোঝা
  • ভ্রম বা বিভ্রান্তিকর চিন্তাভাবনা

ডিমেনশিয়ার কারণ:

ডিমেনশিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তবে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. আলঝাইমার রোগ:
    • ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এটি মস্তিষ্কের কোষের ধ্বংসের কারণে ঘটে।
  2. ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া:
    • মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাতের কারণে সৃষ্টি হয়, যা স্ট্রোক বা অন্যান্য হৃদরোগের ফলাফল।
  3. লুই বডি ডিমেনশিয়া:
    • এটি মস্তিষ্কের কোষে অস্বাভাবিক প্রোটিন গঠনের কারণে ঘটে।
  4. ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া:
    • মস্তিষ্কের সামনের ও পাশের অংশের কোষ ধ্বংসের ফলে হয়।
  5. অন্য কারণ:
    • মস্তিষ্কে আঘাত
    • সংক্রমণ (যেমন, HIV)
    • মাদকাসক্তি বা বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব

ঝুঁকি ফ্যাক্টর:

  • বয়স (৬৫ বছরের বেশি ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়)
  • পারিবারিক ইতিহাস
  • উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বা স্থূলতা
  • ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন

ডিমেনশিয়ার চিকিৎসা:

ডিমেনশিয়ার জন্য স্থায়ী কোনো নিরাময় নেই। তবে কিছু চিকিৎসা লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ ও জীবনমান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে:

  1. ওষুধ:
    • কগনিটিভ ফাংশন বজায় রাখতে কিছু ওষুধ যেমন ডোনেপেজিল, মেম্যান্টাইন ব্যবহৃত হয়।
  2. থেরাপি:
    • কগনিটিভ থেরাপি এবং আচরণগত থেরাপি।
  3. জীবনধারার পরিবর্তন:
    • স্বাস্থ্যকর খাদ্য, ব্যায়াম, এবং মানসিকভাবে সক্রিয় থাকা।

প্রতিরোধের উপায়:

  • মানসিক ও শারীরিক ব্যায়াম করা
  • হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
  • ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা

ডিমেনশিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদী অবস্থা, যা সঠিক যত্ন এবং সমর্থনের মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পরিবারের ভূমিকা এবং মানসিক সমর্থন রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

FacebookX
Najrin Akter
Najrin Akter

আমি নাজরিন আক্তার, সাধারণ ও অজানা বিষয়ে জানার অগ্রহী ! এখানে আমি এই গুলা নিয়ে নিয়মিত লেখা লেখি করতেছি ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *