আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কি?

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আনীত একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগ ও পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিল।

মামলার অভিযোগ ছিল যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছিলেন। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা ভারতে সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করছিলেন।

মামলাটি তৎকালীন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসক আইয়ুব খানের শাসনামলে দায়ের করা হয়েছিল। মামলার মাধ্যমে আইয়ুব খান আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমানকে দমন করার চেষ্টা করছিলেন।

মামলার শুনানি শুরু হয় ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন। মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল হক ও আব্দুল হামিদ।

মামলায় অনেক অসঙ্গতি থাকায় তা জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। পূর্ব পাকিস্তানে সরকার বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খান সরকার বাধ্য হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তরা মুক্তি পান।

তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটিকে সরকারিভাবে নামকরণ করেছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার। এই মামলায় ৩৫ জনকে আসামী করা হয়।

আসামীরা সকলেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তারা হলেন –

  1. শেখ মুজিবুর রহমান;
  2. আহমেদ ফজলুর রহমান, সিএসপি;
  3. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন;
  4. স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান;
  5. সাবেক এলএস সুলতানউদ্দীন আহমদ;
  6. এলএসসিডিআই নূর মোহাম্মদ;
  7. ফ্লাইট সার্জেন্ট মফিজ উল্লাহ;
  8. কর্পোরাল আবদুস সামাদ;
  9. সাবেক হাবিল দলিল উদ্দিন;
  10. রুহুল কুদ্দুস সিএসপি;
  11. ফ্লাইট সার্জেন্ট মোঃ ফজলুল হক;
  12. বিভূতি ভূষণ চৌধুরী (ওরফে মানিক চৌধুরী);
  13. বিধান কৃষ্ণ সেন;
  14. সুবেদার আবদুর রাজ্জাক;
  15. সাবেক কেরানি মুজিবুর রহমান;
  16. সাবেক ফ্লাইট সার্জেন্ট মোঃ আব্দুর রাজ্জাক;
  17. সার্জেন্ট জহুরুল হক;
  18. এ. বি. খুরশীদ;
  19. খান মোহাম্মদ শামসুর রহমান, সিএসপি;
  20. একেএম শামসুল হক;
  21. হাবিলদার আজিজুল হক;
  22. মাহফুজুল বারী;
  23. সার্জেন্ট শামসুল হক;
  24. শামসুল আলম;
  25. ক্যাপ্টেন মোঃ আব্দুল মোতালেব;
  26. ক্যাপ্টেন এ. শওকত আলী;
  27. ক্যাপ্টেন খোন্দকার নাজমুল হুদা;
  28. ক্যাপ্টেন এ. এন. এম নূরুজ্জামান;
  29. সার্জেন্ট আবদুল জলিল;
  30. মাহবুব উদ্দীন চৌধুরী;
  31. লেঃ এম রহমান;
  32. মহসিন চৌধুরী
  33. সাবেক সুবেদার তাজুল ইসলাম;
  34. আলী রেজা;
  35. ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দীন এবং
  36. ল্যাঃ আবদুর রউফ।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই মামলার ফলে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা তীব্রতর হয়। এই মামলার ফলে জন্ম হয় ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের, যা পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *