লাহোর প্রস্তাব (Lahore Resolution) ছিল ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি, যা ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোর শহরের মিনার-ই-পাকিস্তান প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগের বার্ষিক সম্মেলনে গৃহীত হয়। এই প্রস্তাব পরবর্তীতে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি হয়ে ওঠে।
লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি:
- ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পরে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে ধারণা জন্মায় যে, কংগ্রেস প্রধানত হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং মুসলমানদের অধিকার রক্ষা করতে পারবে না।
- মুসলিম নেতারা বুঝতে পারেন যে একটি পৃথক রাষ্ট্র ছাড়া মুসলমানদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা সম্ভব নয়।
লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য:
- পৃথক রাষ্ট্রের দাবি:
ব্রিটিশ ভারতের মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকাগুলো (যেমন পাঞ্জাব, সিন্ধু, বালুচিস্তান, এবং বাংলা) একত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হবে। - আলাদা শাসন ব্যবস্থা:
মুসলিম ও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা পৃথকভাবে স্বাধীন ও স্বশাসিত হবে। - সংখ্যালঘু অধিকার:
প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনৈতিক অধিকার এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব:
- এটি ভারতীয় মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের ধারণা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করে।
- এই প্রস্তাব থেকেই পাকিস্তান সৃষ্টির ভিত্তি গড়ে ওঠে।
- প্রস্তাবটি পরবর্তীতে পাকিস্তান আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
পরবর্তী প্রভাব:
- ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মূলত লাহোর প্রস্তাবের সফল বাস্তবায়ন ছিল।
লাহোর প্রস্তাব ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম জাতীয়তাবাদের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছিল।