বারাসাত বিদ্রোহ ছিল ১৮৩১ সালে তিতুমীরের নেতৃত্বে বাংলায় সংঘটিত একটি কৃষক বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল জমিদারদের শোষণ ও নীলকরদের অত্যাচার। তিতুমীর ছিলেন একজন ধর্মীয় নেতা। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করেন।
১৮৩০ সালের অক্টোবর মাসে তিতুমীর ও তাঁর সমর্থকরা তাদের প্রধান ঘাঁটি নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে একটি মজবুত বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করা হয়। গোলাম মাসুমের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে একটি সুদক্ষ লাঠিয়াল ও প্রতিরোধ বাহিনী। এবার তিতুমীরের অনুসারীরা জমিদারদের অন্যায়ের প্রতিকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। লাউঘাটায় এক সংঘর্ষে জমিদার দেবনাথ রায় নিহত হন। পার্শ্ববর্তী অনেকগুলো গ্রামের উপর তিতুমীরের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদারদের প্ররোচনায় মুলাহাটির নীলকুঠির পক্ষ থেকে তিতুমীরের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেয়ায় তাঁর বাহিনী নীলকুঠি আক্রমণ করে তা লুন্ঠন করে কুঠির তত্ত্বাবধায়ককে বন্দি করে নিয়ে যায়।
ব্রিটিশ সরকার এই বিদ্রোহকে গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। তারা তিতুমীরের বিরুদ্ধে একটি বড় সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার অনুসারীদের আক্রমণ করে। তিতুমীরের বাহিনী বীরোচিতভাবে যুদ্ধ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পরাজিত হয়। তিতুমীরের মৃত্যু হয় এই যুদ্ধে।
বারাসাত বিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই বিদ্রোহের ফলে বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষেত্র প্রসারিত হয়। এছাড়াও, এই বিদ্রোহের ফলে বাংলার কৃষক শ্রেণীর মধ্যে জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটে।
বারাসাত বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি হল:
- জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচার
- নীলকরদের অত্যাচার
- ব্রিটিশ শাসনের অবিচার ও শোষণ
বারাসাত বিদ্রোহের ফলাফলগুলি হল:
- বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষেত্র প্রসারিত হয়।
- বাংলার কৃষক শ্রেণীর মধ্যে জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটে।
- ব্রিটিশ সরকার বাংলায় কৃষকদের শোষণের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
Comments (0)