ডেঙ্গুর লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার জেনে নিন?

ডেঙ্গু হলো একটি সংক্রামক রোগ যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন রয়েছে, এবং একটি ধরনের সংক্রমণের পরে, একজন ব্যক্তি আরও তিনটি ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে সংবেদনশীল থাকে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশা কামড়ানোর ৩–১৪ দিনের মধ্যে (গড়ে ৪–৭দিন) শুরু হয়। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • শরীরব্যথা
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • গলা ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • ক্লান্তি
  • ক্ষুধামন্দা

কিছু ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু গুরুতর হতে পারে এবং নিম্নলিখিত জটিলতাগুলির কারণ হতে পারে:

  • ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS): এটি একটি জীবন-হুমকিস্বরূপ জটিলতা যা রক্তচাপ হ্রাস, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • ডেঙ্গু রক্ত জমাট বাঁধা সিনড্রোম (DBD): এটি একটি জটিলতা যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে, যা অঙ্গ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতির দিকে পরিচালিত করতে পারে।
  • ডেঙ্গু প্লেটলেট-নিম্ন রক্তপাতের সিনড্রোম (DPLTS): এটি একটি জটিলতা যা প্লেটলেট সংখ্যা কমিয়ে দেয়, যা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা

ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা সাধারণত লক্ষণগুলির উপশম করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

  • ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া, তরল পান করা এবং প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া উচিত। অ্যাসপিরিন বা অন্যান্য আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ এড়ানো, কারণ এগুলি রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে
  • ডেঙ্গু হলে চিকিৎসকরা বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। যেমন- ভাতের মাড়, স্যালাইন, ডাবের পানি, স্যুপ, ফলের রস, লেবুর পানি ইত্যাদি। তরল খাবার ৯০ শতাংশ কমায় ডেঙ্গুর তীব্রতা। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, ছোট মাছের ঝোল বেশি করে রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। 
  • ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়। তাই প্লাটিলেট বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন- সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালংশাক, আদা, রসুন ও হলুদ।
  • পেয়ারার শরবত পান করা যেতে পারে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই পানীয়টি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ডেঙ্গু সংক্রমণ উপশম করবে।
  • রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে নিম পাতার রস ভালো কাজ করে। এটি শ্বেত রক্তকনিকার সংখ্যাও বৃদ্ধি করে। নিম পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুণও আছে।

প্রতিকার

ডেঙ্গু প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো এডিস মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এডিস মশা সাধারণত সকাল এবং সন্ধ্যায় সক্রিয় থাকে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

  • মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশা প্রতিরোধী ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা
  • মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য পোশাক পরুন।
  • মশার প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।
  • আপনার বাড়ি এবং আশেপাশের এলাকায় মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করুন।

ডেঙ্গু একটি গুরুতর রোগ হতে পারে, তবে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এটি থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব। ডেঙ্গু জ্বরের সন্দেহ হলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

FacebookX
Kamrul Islam
Kamrul Islam

সময় পেলেই মানেকীতে সাম্প্রতিক ও সাধারণ বিষয়ে লেখা লিখি করি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *