অপারেশন সার্চলাইট ছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত একটি সামরিক অভিযান, যা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এ সংঘটিত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে শুরু হওয়া রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনগুলোকে নির্মমভাবে দমন করা এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে চাপা দেওয়া।
পটভূমি
– রাজনৈতিক অস্থিরতা: ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে।
– আন্দোলন ও প্রতিরোধ: ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতি ব্যাপক অসন্তোষ এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে, যা ধীরে ধীরে স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়।
অভিযানটি কীভাবে পরিচালিত হয়েছিল
– শুরু: রাতে হুট করে শুরু হওয়া অভিযানে ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আক্রমণ চালানো হয়।
– টার্গেট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ হল, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং ই.পি.আরের হেডকোয়ার্টার ছিল প্রধান টার্গেট।
– পদ্ধতি: বাঙালি বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষকে বিশেষভাবে নিশানা বানানো হয়।
ফলাফল ও প্রভাব
– মানবিক বিপর্যয়: নিরপরাধ মানুষের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসযজ্ঞ এবং এর ফলে সৃষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটনা ঘটে।
– আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: যাই হোক, অভিযানের নির্মমতা ও ব্যাপকতা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রচারের ফলে বিশ্বে সমালোচনা হয়।
– স্বাধীনতা সংগ্রাম: অপারেশন সার্চলাইটের পর থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতর হয় এবং এটি স্বাধীনতা অর্জনের পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
অপারেশন সার্চলাইট ছিল সেই ট্রিগার যা বাঙালি জাতিকে তাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে সম্পূর্ণরূপে সম্মুখীন হতে বাধ্য করে। এই বর্বর অভিযান শেষে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তি রচিত হয়।