ইকো-ফেমিনিজম (Ecofeminism) হলো একটি দার্শনিক এবং সক্রিয়তাবাদী মতবাদ, যা নারীবাদ (Feminism) এবং পরিবেশবাদ (Environmentalism) এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। এটি মূলত বিশ্বাস করে যে নারীদের প্রতি নির্যাতন এবং প্রকৃতির প্রতি শোষণ একে অপরের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত।
ইকো-ফেমিনিজমের মূল বিষয়বস্তু:
- নারী এবং প্রকৃতির সংযোগ: ইকো-ফেমিনিজম দাবি করে যে নারীদের এবং প্রকৃতির প্রতি যে ধরনের শোষণ, অবহেলা এবং সহিংসতা হয়, তার মূল কারণ হলো পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং শোষণকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামো।
- পিতৃতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা:
ইকো-ফেমিনিস্টরা মনে করেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নারী ও প্রকৃতিকে শাসন করার প্রবণতা তৈরি করে। এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং নারীদের ক্ষমতাহীন করার চেষ্টা করা হয়। - অধিকার এবং ন্যায়বিচার:
এটি নারীর অধিকার এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকে একত্রিত করে, কারণ পরিবেশের উপর নির্ভরশীল অনেক নারীর জীবন এবং জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবেশের শোষণ বা ধ্বংসের মাধ্যমে। - সামাজিক ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন:
ইকো-ফেমিনিজম একটি টেকসই উন্নয়ন কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানায়, যেখানে প্রকৃতি এবং মানবজীবন সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
মূল ধারণা:
ইকো-ফেমিনিজম মনে করে, মানবজাতি এবং প্রকৃতির মধ্যে একটি পারস্পরিক নির্ভরশীল সম্পর্ক রয়েছে। এটি পরিবেশগত ন্যায়বিচার এবং সামাজিক লিঙ্গ সমতার উপর জোর দিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গড়ার ধারণা দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, চিপকো আন্দোলন (Chipko Movement) বা “গাছ আলিঙ্গন” আন্দোলন একটি ইকো-ফেমিনিস্ট উদাহরণ, যেখানে নারীরা গাছ রক্ষার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার:
ইকো-ফেমিনিজম শুধু নারীর মুক্তি নয়, বরং প্রকৃতি এবং নারীর সম্মান ও অধিকার রক্ষার মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক এবং টেকসই পৃথিবী গড়ার প্রচেষ্টা। এটি পরিবেশ ও মানবাধিকারের আন্তঃসম্পর্ককে তুলে ধরে।