Skip to content
রাসেল ভাইপার

রাসেল ভাইপার (Russell’s viper), বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পরিচিত এবং ভয়ঙ্কর বিষাক্ত সাপ। এরা পরিবারের Viperidae-এর অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের বিষ অত্যন্ত প্রভাবশালী।

এই সাপটি স্কটিশ প্রকৃতিবিদ প্যাট্রিক রাসেলের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে, যিনি ভারতীয় সাপ সম্পর্কে বিস্তৃত গবেষণা করেছেন।

রাসেল ভাইপার সাপ: একটি পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি

শারীরিক বৈশিষ্ট্য

রাসেল ভাইপার সাপটি বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সহজেই চিহ্নিত করা যায়:

  • আকার: প্রাপ্তবয়স্ক রাসেল ভাইপার সাধারণত ৪ থেকে ৬ ফুট (১.২ থেকে ১.৮ মিটার) পর্যন্ত লম্বা হয়, তবে কিছু কিছু সাপ ৭ ফুট (২.১ মিটার) পর্যন্ত হতে পারে।
  • রঙ ও দাগ: তাদের দেহের রঙ হলুদাভ-বাদামী বা ধূসর হয়। সারা শরীরে তিন সারি কালো, সাদা ও বাদামী রঙের গোলাকার বা ডিম্বাকার দাগ থাকে।
  • মাথা: মাথা ত্রিভুজাকার এবং দেহ থেকে স্পষ্টভাবে পৃথক। মাথার উপর তিনটি বড় সাদা বা হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়।
  • চোখ: রাসেল ভাইপারের চোখ বড় এবং এর মণি খাড়াভাবে বিন্যস্ত থাকে, যা রাতে দেখতে সাহায্য করে।
  • স্কেল: এদের স্কেল রুক্ষ এবং শরীরের উপরিভাগে কিলযুক্ত থাকে।

ভৌগোলিক বিস্তৃতি এবং বাসস্থান

রাসেল ভাইপার দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়:

  • অবস্থান: রাসেল ভাইপার ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, এবং পাকিস্তানের বিস্তৃত অঞ্চলে পাওয়া যায়।
  • বাসস্থান: এরা শুষ্ক ও আর্দ্র অঞ্চল, খোলা মাঠ, চাষের জমি, এবং বনের আশেপাশে বসবাস করে। এরা সাধারণত মাটির উপর লুকিয়ে থাকে এবং শিকারের জন্য অপেক্ষা করে।

আচরণ ও স্বভাব

রাসেল ভাইপার সাপের আচরণ এবং স্বভাব তাদের বিশেষত্ব তুলে ধরে:

  • আচরণ: রাসেল ভাইপার সাধারণত নিশাচর, অর্থাৎ রাতে সক্রিয় থাকে। তবে দিনের বেলাতেও এদের দেখা যায়। বিপদের সম্মুখীন হলে এরা ফোঁস ফোঁস শব্দ করে, যা শত্রুকে সতর্ক করে।
  • শিকার: এরা ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ব্যাঙ, এবং ছোট সাপ শিকার করে। এদের শিকার ধরার কৌশল অত্যন্ত দক্ষ।

প্রজনন

রাসেল ভাইপারের প্রজনন প্রক্রিয়া ভিন্ন এবং উল্লেখযোগ্য:

  • প্রজনন ঋতু: সাধারণত বর্ষার শেষে (মে থেকে জুলাই) প্রজনন করে।
  • প্রজনন পদ্ধতি: এরা ডিম পাড়ে না; বরং জীবিত বাচ্চা জন্ম দেয় (viviparous)। একবারে ২০ থেকে ৬০টি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে, যা এদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

বিষ এবং এর প্রভাব

রাসেল ভাইপারের বিষ অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং মানবদেহে গুরুতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে:

  • বিষের ধরন: রাসেল ভাইপারের বিষ হেমোটক্সিক এবং নিউরোটক্সিক, যা রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে।
  • প্রতিক্রিয়া: কামড়ের ফলে তীব্র ব্যথা, ফোলা, রক্তপাত, শ্বাসকষ্ট, এবং কিডনি বিকল হতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে মৃত্যুও হতে পারে।
  • চিকিৎসা: রাসেল ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। বিষের প্রতিশেধক (antivenom) প্রয়োগ করা হয় এবং অন্যান্য চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

সংরক্ষণ এবং সুরক্ষা

রাসেল ভাইপারের সংরক্ষণ এবং সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ:

  • সংরক্ষণ অবস্থা: রাসেল ভাইপারগুলি বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় নেই, তবে এদের আবাসস্থল ধ্বংস এবং শিকারের কারণে সংখ্যা কমছে।
  • মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষ: মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষ এদের জন্য বড় হুমকি। তাই এদের সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

উপসংহার

রাসেল ভাইপার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পরিচিত এবং বিপজ্জনক সাপ। তাদের বিষ এবং প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একই সঙ্গে, এদের সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা উচিত, কারণ এরা পরিবেশের খাদ্য শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের সম্পর্কে জ্ঞান এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করলে মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষ কমানো সম্ভব হবে এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।

FacebookX

সময় পেলেই মানেকীতে সাম্প্রতিক ও সাধারণ বিষয়ে লেখা লিখি করি

Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top