মূল্যস্ফীতি বলতে সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রব্য ও সেবার দামের সার্বিক বৃদ্ধিকে বোঝায়। অর্থাৎ, আজকে যে দামে আপনি কোনো জিনিস কিনছেন, কালকে সেই একই জিনিসের দাম আরও বাড়তে পারে।
উদাহরণ: ধরুন, আজকে আপনি এক কেজি চাল ৫০ টাকায় কিনলেন। কিন্তু এক বছর পর একই চাল আপনাকে ৬০ টাকায় কিনতে হতে পারে। এই দাম বাড়ার ঘটনাই মূল্যস্ফীতি।
মূল্যস্ফীতি (Inflation) হলো অর্থনৈতিক একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্যের দাম এবং সেবার মূল্য বাড়তে থাকে।
কেন হয় মূল্যস্ফীতি?
মূল্যস্ফীতি হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন:
- অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহ: যখন বাজারে অর্থের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, তখন দ্রব্যের চাহিদা বাড়ে কিন্তু সরবরাহ একই থাকে। ফলে দাম বাড়ে।
- উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি: যদি কাঁচামালের দাম বাড়ে, শ্রমিকদের বেতন বাড়ে বা পরিবহন খরচ বাড়ে, তাহলে পণ্য উৎপাদনের খরচও বাড়বে। এই বাড়তি খরচ উৎপাদকরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দেয়।
- চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম: যদি কোনো পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় কিন্তু সরবরাহ একই থাকে, তাহলেও দাম বাড়তে পারে।
- মুদ্রার অবমূল্যায়ন: যদি কোনো দেশের মুদ্রার মান কমে যায়, তাহলে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়বে, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে অবদান রাখবে।
মূল্যস্ফীতির প্রভাব
- ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস: মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়। অর্থাৎ, একই টাকায় আগের তুলনায় কম পণ্য কেনা যায়।
- সঞ্চয়ের মূল্য হ্রাস: ব্যাংকে বা অন্য কোথাও সঞ্চিত অর্থের মূল্য কমে যায়।
- বিনিয়োগের উপর প্রভাব: মূল্যস্ফীতি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে, যার ফলে মানুষ বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারায়।
- সামাজিক অস্থিরতা: উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করতে পারে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যেমন:
- মুদ্রানীতি: কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে অর্থ সরবরাহ কমাতে পারে।
- রাজস্ব নীতি: সরকার কর বাড়িয়ে অর্থ সরবরাহ কমাতে পারে।
- উৎপাদন বৃদ্ধি: উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষা করা যেতে পারে।
মূল্যস্ফীতি একটি জটিল অর্থনৈতিক বিষয়। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আপনি একজন অর্থনীতিবিদের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।