সাকরাইন উৎসব হলো বাংলাদেশের পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাণবন্ত উৎসব। এটি মূলত পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে উদযাপিত হয়, যা বাংলা বছরের পৌষ মাসের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয়। সাকরাইন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক চর্চার একটি অন্যতম নিদর্শন, যা মকর সংক্রান্তি বা শীতের বিদায়ের সময় উদযাপিত হয়।
সাকরাইন উৎসবের বৈশিষ্ট্য
- ঘুড়ি উৎসব:
সাকরাইনের প্রধান আকর্ষণ হলো ঘুড়ি ওড়ানো। পুরান ঢাকার বাসিন্দারা তাদের ঘরের ছাদে উঠে রঙিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা করে। ঘুড়ি ওড়ানোর সময় ছাদগুলোতে হৈ-হুল্লোড়, সংগীত আর আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। - আতশবাজি ও ফানুস:
সন্ধ্যার পর উৎসব আরও রঙিন হয়ে ওঠে আতশবাজি আর ফানুস উড়ানোর মাধ্যমে। বিভিন্ন রঙের আলোয় ঢাকার আকাশ ভরে ওঠে। - সুর ও সংগীত:
ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি অনেকেই সঙ্গীত, নাচ, এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আয়োজন করে। - পিঠাপুলি ও খাবার:
উৎসবের অন্যতম অংশ হলো বাঙালি ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি, খেজুরের গুড়, এবং অন্যান্য মিষ্টান্ন। এই দিনে বাড়িতে বাড়িতে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
সাকরাইন উৎসবের মূল শিকড় হিন্দু ধর্মের মকর সংক্রান্তি থেকে উদ্ভূত হলেও এটি বর্তমানে একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং সামাজিক উৎসব হিসেবে পরিচিত। এটি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের প্রতীক এবং ঢাকাবাসীর ঐক্যের প্রতিফলন। উৎসবটি প্রাচীনকাল থেকে ঢাকায় উদযাপিত হয়ে আসছে এবং এটি ঢাকার সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
সামাজিক প্রভাব
সাকরাইন উৎসব মানুষে মানুষে সম্প্রীতি এবং বন্ধন দৃঢ় করার একটি মাধ্যম। এটি ঢাকার মানুষের সংস্কৃতির গৌরব এবং তাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। ধর্ম, বয়স, বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাই এই উৎসবে অংশ নেয়, যা সমাজে সৌহার্দ্য ও মিলনের বার্তা দেয়।
সংক্ষেপে, সাকরাইন একটি আনন্দময় উৎসব যা পুরান ঢাকার ঐতিহ্য এবং বাঙালির সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। এটি একটি সময় যখন সবাই একত্রিত হয়ে পুরনো দিনের স্মৃতি এবং ঐতিহ্যকে উদযাপন করে।