সবুজ বিপ্লব বলতে একটি কৃষি-প্রযুক্তি আন্দোলনকে বোঝায়, যা ১৯৬০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। এর মূল লক্ষ্য ছিল খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়া।
সবুজ বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য:
- উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার:
- উচ্চফলনশীল শস্যের জাত (HYV) উদ্ভাবন।
- রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োগ।
- উন্নত সেচ ব্যবস্থা।
- যান্ত্রিকীকরণ:
- কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার (যেমন, ট্র্যাক্টর ও কম্বাইন হার্ভেস্টার)।
- উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সমন্বয়।
- গবেষণা ও উন্নয়ন:
- কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে নতুন জাতের শস্য উদ্ভাবন।
- উদ্ভিদ জেনেটিক্স ও বায়োটেকনোলজির উন্নয়ন।
সবুজ বিপ্লবের সূচনা:
সবুজ বিপ্লবের অগ্রদূত ছিলেন নরম্যান বোরলাগ, যিনি উচ্চফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবন করে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেন। ভারতে এটি সূচিত হয় ১৯৬০-এর দশকে ড. এম.এস. স্বামীনাথন-এর নেতৃত্বে।
সবুজ বিপ্লবের প্রভাব:
- ইতিবাচক প্রভাব:
- খাদ্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
- দারিদ্র্য ও ক্ষুধার হার কমে যায়।
- কৃষি খাতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে।
- নেতিবাচক প্রভাব:
- মাটির উর্বরতা হ্রাস (রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার)।
- জলের সংকট (অতিরিক্ত সেচ ব্যবস্থার কারণে)।
- পরিবেশ দূষণ।
বাংলাদেশে সবুজ বিপ্লব:
বাংলাদেশেও সবুজ বিপ্লবের প্রভাব পড়ে। উচ্চফলনশীল ধান, গম ও অন্যান্য শস্যের চাষ কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েছে। তবে পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।
সবুজ বিপ্লব বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, এর টেকসইতা নিয়ে সমালোচনা ও নতুন সমাধানের প্রস্তাবনা চলছে।