প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) শুরু হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। এ কারণগুলোকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়: রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক। নিচে প্রধান কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:
১. জাতীয়তাবাদ (Nationalism)
- ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নিজের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিল। বিশেষ করে বলকান অঞ্চলে সার্বিয়া ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল।
- অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের অধীন স্লাভ জাতিগোষ্ঠী নিজেদের স্বাধীনতা দাবি করছিল, যা ইউরোপে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল।
২. সাম্রাজ্যবাদ (Imperialism)
- ইউরোপীয় দেশগুলো নতুন উপনিবেশ দখল ও অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিযোগিতা করছিল।
- ব্রিটেন, ফ্রান্স, এবং জার্মানি তাদের সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহী ছিল, যা তাদের মধ্যে শত্রুতা বাড়িয়ে দেয়।
৩. সামরিকবাদ (Militarism)
- ইউরোপের দেশগুলো বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলে এবং আধুনিক অস্ত্র তৈরি শুরু করে।
- বিশেষ করে জার্মানি ও ব্রিটেনের মধ্যে নৌবাহিনীর আধিপত্য নিয়ে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়।
- এই সামরিক প্রস্তুতি এবং যুদ্ধের মানসিকতা যুদ্ধের মাটি প্রস্তুত করে।
৪. জোটবদ্ধতা (Alliances)
- ইউরোপে দুইটি প্রধান সামরিক জোট তৈরি হয়:
- ত্রিমহাসম্প্রীতি জোট (Triple Alliance): জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, এবং ইতালি।
- ত্রিমহাসমঝোতা (Triple Entente): ব্রিটেন, ফ্রান্স, এবং রাশিয়া।
- এই জোটগুলো বিভিন্ন দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে এবং যুদ্ধ বাধলে জোটবদ্ধ দেশগুলো এতে জড়িয়ে পড়ে।
৫. সরায়েভো হত্যা (Assassination of Archduke Franz Ferdinand)
- ১৯১৪ সালের ২৮ জুন, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুবরাজ ফ্রান্স ফের্ডিনান্ড ও তার স্ত্রীকে সার্বিয়া-সমর্থিত এক বসনিয়ান জাতীয়তাবাদী গাভরিলো প্রিন্সিপ হত্যা করে।
- এই ঘটনার পর অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর একের পর এক জোটভুক্ত দেশগুলো যুদ্ধের ময়দানে নামে, যা বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়।
৬. বলকান সংকট (Balkan Crisis)
- বলকান অঞ্চলকে ইউরোপের “গান পাউডার কেগ” বলা হতো, কারণ এখানে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং রাশিয়ার মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা ছিল।
- এই অঞ্চলেই সার্বিয়ার মতো ছোট দেশগুলো বড় শক্তির সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
৭. অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা
- শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়।
- বিশেষ করে জার্মানির দ্রুত শিল্পোন্নতি এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের অর্থনৈতিক আধিপত্যের মধ্যে সংঘাত বাড়তে থাকে।
সংক্ষেপে
এই কারণগুলো পরস্পর সম্পর্কিত এবং ধীরে ধীরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিস্ফোরণ ঘটায়। এর ফলে প্রায় ৪০টি দেশ এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যা মানব ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছে।