জিজিয়া কী ?

জিজিয়া ছিল অমুসলিম প্রজার উপর ধার্য্যকৃত একটি স্বল্প বা লঘু কর। জীবন ও সম্পত্তির রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণের প্রতিদানে অমুসলিম প্রজাগণ মুসলিম রাষ্ট্রকে যে কর প্রদান করত তাকেই জিজিয়া নামে অভিহিত করা হয়। অমুসলিম জিম্মি প্রজাদের উপর মহানবী (সাঃ)-এর আমল থেকেই তাদের জানমাল ও ধর্মের নিরাপত্তার বিনিময়ে জিজিয়া কর ধার্য্য করা হত। সক্ষম ও যুদ্ধক্ষম অমুসলিমগণ সামরিক বাহিনীতে যোগ দানের পরিবর্তে জিজিয়া কর প্রদান করত।

জিজিয়ার হার-

মহানবী (সাঃ)-এর আমলে জিজিয়ার হার ছিল মাথাপিছু এক দিনার। হযরত ওমরের খিলাফত কালে ইহার কিছুটা পরিবর্তন প্ররিলক্ষিত হয়। তিনি জিজিয়া কর প্রদানকারীদেরকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করেন এবং আর্থিক সংগতির ভিত্তিতে জিজিয়া আরোপ করেন।

১. বিত্তশালীদের ৪ দিনার

২. মধ্যবিত্তদের ২ দিনার

৩. নিম্ন বিত্তবানদের ১ দিনার মাথাপিছু ধার্য্য করেন।

উমাইয়া আমলে দলে দলে লোকজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় জিজিয়া দ্বারা রাষ্ট্রীয় আয় কমে যায় এবং ব্যয় বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ইরাকের গভর্ণর হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফের পরামর্শক্রমে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক অনারব মুসলিম ও মাওয়ালিদের উপর জিজিয়া ধার্য্য করেন।

উমাইয়া আমলে জিজিয়া কর মাথাপিছু কোন নির্দিষ্ট নিয়মে আদায় করা হত না। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ জিজিয়া হিসেবে ধার্য্য করা হত। অমুসলমান স্থানীয় প্রধানেরা নিজেরাই তাদের জনগণ হতে নিজেদের নিয়ম কানুন অনুসারে জিজিয়া আদায় করে সরকারি কর্মচারীদের নিকট প্রদান করত। আব্বাসীয় যুগে জিজিয়া অমুসলমানদের উপর ৩টি নির্দিষ্ট হারে মাথাপিছু ধার্য্য করা হত। ধনীদের উপর বৎসরে ৪৮ দিরহাম মধ্যবিত্তদের উপর ২৪ দিরহাম এবং শ্রমিকদের উপর বৎসরে ১২ দিরহাম হারে জিজিয়া ধার্য্য হয়।

মুসলিম ভারতে সব সময়ই অমুসলমানদের নিকট থেকে জিজিয়া আদায় করা হত। সম্রাট আকবর ১৫৬৪ সালে জিজিয়া কর রহিত করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব পুনরায় ১৬৭৯ সালে তা অমুসলমানদের উপর আরোপ করেন।

মুসলিম রাষ্ট্রের রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎসগুলোর অন্যতম ছিল জিজিয়া। অমুসলমান প্রজাদের নিকট থেকে তাদের নিরাপত্তার জন্যে এ কর আদায় করা হত।

FacebookX
Najrin Akter
Najrin Akter

আমি নাজরিন আক্তার, সাধারণ ও অজানা বিষয়ে জানার অগ্রহী ! এখানে আমি এই গুলা নিয়ে নিয়মিত লেখা লেখি করতেছি ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *