জিকা ভাইরাস হলো একটি ফ্ল্যাভিভাইরাস (Flavivirus) যা মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা বনাঞ্চলে বানরের মধ্যে শনাক্ত করা হয়, এবং সেখান থেকেই এর নামকরণ করা হয়েছে। জিকা ভাইরাস সাধারণত মশা, বিশেষ করে এডিস মশার (Aedes mosquitoes) মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এই একই মশা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ও হলুদ জ্বরও ছড়ায়।
জিকা ভাইরাসের লক্ষণ:
জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা যায় না। যদি দেখা যায়, তবে লক্ষণগুলো সাধারণত হালকা এবং ২-৭ দিন স্থায়ী হয়।
- হালকা জ্বর
- শরীরে লালচে দাগ বা র্যাশ
- চোখ লাল হওয়া (কনজাংকটিভাইটিস)
- মাংসপেশি ও সন্ধিতে ব্যথা
- মাথাব্যথা
ঝুঁকি এবং জটিলতা:
- গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকি:
জিকা ভাইরাস গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক। এটি ভ্রূণের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে এবং মাইক্রোসেফালি (শিশুর মাথা অস্বাভাবিক ছোট হয়ে জন্মানো) সহ অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। - গিলিয়ান-ব্যারে সিনড্রোম (GBS):
এটি একটি বিরল কিন্তু গুরুতর অবস্থা, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম স্নায়ুতে আক্রমণ করে। জিকা ভাইরাস সংক্রমণের সাথে GBS এর একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ পদ্ধতি:
- মশার কামড়:
এডিস মশা কামড়ানোর মাধ্যমে এই ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়। - যৌন সংযোগ:
যৌন সংযোগের মাধ্যমেও এটি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়াতে পারে। - রক্ত সঞ্চালন:
সংক্রমিত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। - গর্ভাবস্থায় স্থানান্তর:
মা থেকে ভ্রূণে সংক্রমিত হতে পারে।
প্রতিরোধ:
- মশা নিয়ন্ত্রণ: মশার বংশবিস্তার রোধ করা এবং মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
- মশারির ব্যবহার
- শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরা
- মশা তাড়ানোর স্প্রে বা লোশন ব্যবহার করা
- গর্ভবতী নারীদের সতর্কতা: জিকা ভাইরাস-প্রবণ এলাকায় ভ্রমণ এড়ানো।
- সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক: কনডম ব্যবহার করা।
চিকিৎসা:
জিকা ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই।
- প্রচুর পানি পান করা
- জ্বর ও ব্যথা উপশমের জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করা
- পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া
জিকা ভাইরাস সাধারণত হালকা হয়, তবে গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ এবং সংক্রমণের সম্ভাব্য জটিলতা এটি গুরুতর করে তোলে। তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।