ক্রিকেটে ফলো অন কি? অর্থ, নিয়ম এবং প্রয়োগ

ক্রিকেটে ফলো-অন হলো একটি বিশেষ পরিস্থিতি যেখানে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করা দল, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দলের তুলনায় যথেষ্ট রানের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলে, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দল তাদেরকে আবার ব্যাটিং করতে বাধ্য করতে পারে।

ফলো অন কি?

ক্রিকেটে “ফলো অন” একটি বিশেষ নিয়ম যা টেস্ট এবং প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ব্যবহৃত হয়। যখন কোনো দল প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রতিপক্ষ দলের চেয়ে নির্ধারিত সংখ্যক রানের কম সংগ্রহ করে, তখন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক তার দলকে পুনরায় ব্যাট করতে বাধ্য করতে পারে। এটাই ফলো অন। এটি একটি কৌশল যাতে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপকে আবার দ্রুত চাপে ফেলা যায়।

কিভাবে ফলো অন কাজ করে?

একটি টেস্ট বা প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ফলো অন তখন দেওয়া হয় যখন প্রথম ইনিংসে ব্যাট করা দল তাদের প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসের রান থেকে নির্দিষ্ট ব্যবধানে পিছিয়ে থাকে। নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ হলে ফলো অন প্রয়োগ করা হয়:

  1. ম্যাচের দৈর্ঘ্য: পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচে ফলো অন দেওয়ার জন্য পিছিয়ে থাকা দলের প্রথম ইনিংসের স্কোরকে কমপক্ষে ২০০ রানে পিছিয়ে থাকতে হবে।
  2. ম্যাচের অন্য সময়: তিন বা চার দিনের ম্যাচে ফলো অনের ব্যবধান কমে আসে। তিন দিনের ম্যাচে ১৫০ রানের এবং দুই দিনের ম্যাচে ১০০ রানের ব্যবধান থাকে।

ফলো অনের কৌশলগত ব্যবহার

একটি দল ফলো অন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে কৌশলগত কারণে। যখন তারা নিশ্চিত হয় যে প্রতিপক্ষ দল ক্লান্ত বা ফর্মে নেই, তখন তারা তাদের আবার ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দ্রুত আউট করার চেষ্টা করে।
তবে সব সময় ফলো অন দেওয়া হয় না, কেননা দলকে আরও একবার ফিল্ডিং করার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করতে হয়। যদি ফিল্ডিং দলের বোলাররা ক্লান্ত থাকে, তবে তারা প্রতিপক্ষকে আউট করতে ব্যর্থ হতে পারে এবং সেই দলের ইনিংস দীর্ঘ হতে পারে। এজন্য প্রতিপক্ষের শক্তি, পিচের অবস্থা এবং ম্যাচের সময়কালের উপর নির্ভর করে ফলো অন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফলো-অনের সুবিধা-অসুবিধা:

সুবিধা (দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দলের জন্য):

  • ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় কারণ প্রতিপক্ষকে দুইবার আউট করার সুযোগ তৈরি হয়।
  • সময় বাঁচায়, বিশেষ করে যদি ম্যাচ ড্রয়ের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হয়।

অসুবিধা (ফলো-অন করা দলের জন্য):

  • ব্যাটিং অর্ডার দুর্বল হতে পারে, বিশেষ করে যদি প্রথম ইনিংসে ভালো না করে থাকে।
  • শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়তে পারে, কারণ একটানা দুইবার ব্যাটিং করতে হয়।
  • যদি ফলো-অন করা দল দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো করে, তবে ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

ফলো-অন সম্পর্কিত কিছু তথ্য:

  • ফলো-অন দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, এটি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দলের অধিনায়কের সিদ্ধান্ত।
  • ফলো-অন খুব কমই দেখা যায়, কারণ এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র ৩ বার ফলো-অন করা দল ম্যাচ জিতেছে।

কিছু বিখ্যাত ফলো অন ঘটনা

ক্রিকেট ইতিহাসে ফলো অনের কয়েকটি স্মরণীয় উদাহরণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২০০১ সালে ইডেন গার্ডেনসে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচ। ভারত ফলো অনের মুখোমুখি হওয়ার পর, ভি.ভি.এস. লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়ের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের কারণে ভারত ঐতিহাসিকভাবে ম্যাচটি জিতে নেয়। এই ম্যাচটি ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়।

উপসংহার

ফলো অন ক্রিকেটের একটি কৌশলগত দিক, যা ম্যাচের গতিপ্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তন করতে পারে। সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে এটি প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তবে এর যথাযথ ব্যবহারের জন্য দলকে ম্যাচের অবস্থা, প্রতিপক্ষের শক্তি, এবং নিজেদের খেলোয়াড়দের ফিটনেসের দিকে নজর রাখতে হয়।

FacebookX
kamruz
kamruz

সময় পেলেই মানেকীতে সাম্প্রতিক ও সাধারণ বিষয়ে লেখা লিখি করি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *