কুফু অর্থ কি ?

কাফাহ বা কুফু (আরবি: الكفاءة‎‎; আল-কাফ’আ৷ অর্থঃ দক্ষতা বা যোগ্যতা) হল ইসলামে বিয়ের ব্যাপারে ইসলামী আইনশাস্ত্রের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি শব্দ, যার আরবি ভাষায় আক্ষরিক অর্থ: দক্ষতা বা সমতা, সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ, সমতুল্য ইত্যাদি।

কুফু মানে কি?

কুফু শব্দটি আরবি শব্দ। বাংলায় এর অর্থ হল সমান, সমতুল্য বা সমকক্ষ। বিশেষ করে, বিবাহের ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

বিবাহে কুফুর অর্থ:

বিবাহে কুফু বলতে পাত্র-পাত্রী দুজনের মধ্যে সমতা বোঝায়। এই সমতা শুধুমাত্র সম্পত্তি বা সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে নয়, বরং ধর্ম, চরিত্র, শিক্ষা, পরিবারের পটভূমি ইত্যাদি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে নির্ধারিত হয়।

কেন কুফু গুরুত্বপূর্ণ?

  • সুখী দাম্পত্য জীবন: কুফু মানে হল দুজন মানুষ পরস্পরের সাথে মিল রেখে সুখী জীবনযাপন করতে পারবে।
  • সামাজিক সম্পর্ক: কুফু বিবাহ সামাজিক সম্পর্ককে মজবুত করে এবং সমাজে স্থিতিশীলতা আনে।
  • ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ: ইসলামে কুফু বিবাহকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে কুফুর গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

কুফুর বিভিন্ন দিক:

  • ধর্ম: দুজনের ধর্ম একই হওয়া উত্তম।
  • চরিত্র: দুজনের চরিত্রে মিল থাকা জরুরি।
  • শিক্ষা: শিক্ষাগত যোগ্যতায় যথেষ্ট পার্থক্য না থাকাই ভালো।
  • সামাজিক অবস্থান: সামাজিক অবস্থানে যথেষ্ট পার্থক্য না থাকাই ভালো।
  • আর্থিক অবস্থা: আর্থিক অবস্থায় যথেষ্ট পার্থক্য না থাকাই ভালো।

বিয়ের ক্ষেত্রে ‘কুফু’র গুরুত্ব-

বিয়ে নারী-পুরুষের নৈতিক চরিত্রের পবিত্রতা রক্ষাকারী এবং মানব বংশের ধারা সুষ্ঠুরূপে অব্যাহত রাখার একমাত্র উপায়। বিয়ে হলো একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে নিষ্পন্ন বৈধ বন্ধন ও সামাজিক চুক্তি। বিয়ে এমন একটি চিরাচরিত প্রক্রিয়া যা সৃষ্টির আদি থেকে চলমান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ধর্মভেদে এর বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও বিয়ের মূল উদ্দেশ্য ও পরিচয় এটিই। বিয়ে একটি বৈশ্বিক সার্বজনীন নিয়ম, যা পৃথিবীর সব দেশে সব ধর্মে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টিকেই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এবং বিয়ে করতে উৎসাহ প্রদান করেছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন ‘তোমাদের মধ্যে যাদের স্বামী-স্ত্রী নেই, তাদের বিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নূর, আয়াত ৩২)
রাসূল সা: বলেন ‘হে যুবকরা! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না সে যেন ‘সওম’ পালন করে। কেননা, সওম যৌন ক্ষমতাকে দমন করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫০৬৫)


দাম্পত্যজীবনের সূচনা হয় বিয়ের মাধ্যমে। একটি আদর্শ, সুন্দর ও সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য বিয়ের আগে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে । এসব উপেক্ষা করে জীবনে সুখী হওয়া সম্ভব নয়। বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তার মধ্যে ‘কুফু’ অন্যতম। আরবি ‘কুফু’ শব্দের অর্থ সমতা, সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ, সমতুল্য ইত্যাদি। বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের রুচি, চাহিদা, বংশ, যোগ্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের রুচি, চাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি ভিন্ন হলে সেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন প্রতিষ্ঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একজন উচ্চ শ্রেণীর ছেলেমেয়ের চাহিদা-রুচির সাথে একজন দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের রুচিবোধের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক। আবার একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

উপসংহার:

কুফু বিবাহ একটি সুন্দর ও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুফু বিবাহে দুজন মানুষ পরস্পরের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা রেখে সুখী জীবনযাপন করতে পারে।

FacebookX
Najrin Akter
Najrin Akter

আমি নাজরিন আক্তার, সাধারণ ও অজানা বিষয়ে জানার অগ্রহী ! এখানে আমি এই গুলা নিয়ে নিয়মিত লেখা লেখি করতেছি ..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *