“সাম্প্রদায়িক” শব্দটির অর্থ হলো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কিত বিষয় বা আচরণ। এটি সাধারণত ধর্মীয়, জাতিগত, বা সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রদায়িকতা তখন দেখা যায় যখন ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বা বিরোধ তৈরি হয়, যা অনেক সময় রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় কারণে হতে পারে। সাম্প্রদায়িকতা থেকে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে সমাজে অস্থিরতা বা হিংসা ছড়াতে পারে।
সাম্প্রদায়িকতার অর্থ
সাম্প্রদায়িকতা শব্দটি শুনলে আমাদের মনে একটা বিভক্তির ছবি ভেসে ওঠে। এটি কোনো সমাজের জন্য একটা বিষাক্ত উপাদান।
সাধারণ অর্থে:
- ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভক্তি: সাম্প্রদায়িকতা বলতে সাধারণত ধর্মীয় ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করে তোলা, এক ধর্মের মানুষকে অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা পোষণ করানোকেই বোঝায়।
- সামাজিক বৈষম্য: এটি শুধু ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, জাতি, গোষ্ঠী, ভাষা ইত্যাদি ভিত্তিতেও সাম্প্রদায়িকতা দেখা দিতে পারে।
- রাজনৈতিক স্বার্থ: অনেক সময় রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে।
গভীর অর্থে:
- সহিষ্ণুতার অভাব: সাম্প্রদায়িকতা হল সহিষ্ণুতার অভাব। এটি এক ধরনের অসাম্যবোধ যা মানুষকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে বাধ্য করে।
- ভুল ধারণা: সাম্প্রদায়িকতার মূলে থাকে ভুল ধারণা ও পূর্বগৃহীত ধারণা। এক সম্প্রদায়ের মানুষ অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে এবং সেই ভিত্তিতে তাদের বিরোধিতা করে।
- সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি: সাম্প্রদায়িকতা সামাজিক সম্প্রীতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এটি সমাজকে বিভক্ত করে এবং দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।
সাম্প্রদায়িকতার কারণ:
- অজ্ঞতা: বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে অজ্ঞতা সাম্প্রদায়িকতার অন্যতম কারণ।
- রাজনৈতিক উদ্দেশ্য: রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে পারে।
- অর্থনৈতিক বৈষম্য: অর্থনৈতিক বৈষম্য সাম্প্রদায়িকতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- শিক্ষার অভাব: শিক্ষার অভাব মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার শিকার হতে বাধ্য করে।
সাম্প্রদায়িকতার ফলাফল:
- দাঙ্গা: সাম্প্রদায়িকতা দাঙ্গা ও সহিংসতার জন্ম দেয়।
- সামাজিক অস্থিরতা: এটি সমাজকে অস্থির করে তোলে।
- উন্নয়নের বাধা: সাম্প্রদায়িকতা দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।
সাম্প্রদায়িকতা দূর করার উপায়:
- শিক্ষা: শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা।
- সহিষ্ণুতা: সকল ধর্ম, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার প্রতি সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করা।
- সম্প্রীতি: বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধি করা।
- রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি: রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে: সাম্প্রদায়িকতা মানবতার জন্য একটা বড় হুমকি। এটি দূর করার জন্য সকলকেই একযোগে কাজ করতে হবে।