Skip to content

শবে বরাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা আরবি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতে পালিত হয়। এই রাতকে “লাইলাতুল বরাত” বা “মুক্তির রজনী” বলা হয়। অনেক মুসলিম এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করেন এবং পরদিন নফল রোজা রাখেন। শবে বরাতের রোজার জন্য সঠিক নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগ পোস্টে আমরা শবে বরাতের রোজার নিয়ত, ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।


শবে বরাতের রোজার নিয়ত (বাংলায় ও আরবিতে)

শবে বরাতের পরদিন নফল রোজা রাখা সুন্নত। রোজার জন্য নিয়ত করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে মনে রাখতে হবে, নিয়ত মনের ইচ্ছা থেকেই হয়ে যায়। মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়, তবে বলা যেতে পারে।

বাংলায় রোজার নিয়ত:

👉 “আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামীকাল নফল রোজা রাখার নিয়ত করলাম।”

আরবি রোজার নিয়ত:

👉 نَوَيْتُ صَوْمَ غَدٍ لِلّٰهِ تَعَالٰى
👉 উচ্চারণ: “নাওয়াইতু সাওমা গাদিন লিল্লাহি তা’আলা”
👉 অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করলাম।

📌 টিপস:

  • যদি কেউ রাতে নিয়ত করতে ভুলে যান, তাহলে সুবহে সাদিকের (ফজরের আজানের) আগে অথবা দিনের বেলা যদি কিছু না খেয়ে থাকেন, তাহলে দুপুরের আগ পর্যন্ত নিয়ত করে নিতে পারেন।
  • নফল রোজার ক্ষেত্রে মধ্যাহ্নের (যোহরের) আগ পর্যন্ত নিয়ত করা যায়, তবে শবে বরাতের ফজিলত পেতে হলে রাতেই নিয়ত করাই উত্তম।

শবে বরাতের রোজা রাখার সময়

শবে বরাতের রোজা সাধারণত শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (শবে বরাতের রাত) এবং ১৫ তারিখ দিনে রাখা হয়। তবে শাবান মাসের যেকোনো দিন রোজা রাখা যায়, বিশেষত শাবান মাসের শেষ দিকে বেশি রোজা রাখা উত্তম।


শবে বরাতের রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব

১. রাসুল (সা.) এর আমল:

✅ হজরত আলী (রা.) বলেন, “শাবান মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেক বেশি নফল রোজা রাখতেন।” (সুনান আন-নাসায়ি)

✅ উম্মুল মুমিনিন আয়িশা (রা.) বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে পূর্ণ রোজা রাখতে দেখিনি, তবে শাবান মাসে তিনি বেশি পরিমাণে রোজা রাখতেন।” (সহিহ মুসলিম)

২. গুনাহ মাফের সুযোগ:

✅ শবে বরাতের রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং দোয়া কবুল করেন। তাই এই রাতের আমলকে পরিপূর্ণ করতে পরদিন নফল রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

৩. নফল রোজার বিশেষ পুরস্কার:

✅ হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি একদিন নফল রোজা রাখে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখবেন।” (তিরমিজি, হাদিস: ৭৬৭)

✅ আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি একদিন নফল রোজা রাখে, তার জন্য জান্নাতের একটি দরজা খুলে দেওয়া হয়।”

📌 এই কারণে, শবে বরাতের রোজা আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ!


শবে বরাতের রোজা ছাড়াও করণীয় আমল

নফল নামাজ:

  • এই রাতে নফল নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
  • হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি এ রাতে ইবাদতে দাঁড়ায়, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।”

তওবা ও দোয়া:

  • আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মাফ চাওয়া উচিত।
  • এই রাতে দোয়া কবুলের বিশেষ সুযোগ রয়েছে।

কুরআন তিলাওয়াত:

  • শবে বরাতের রাত কুরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশেষ বরকতময়।

পরিবার ও আত্মীয়দের জন্য দোয়া করা:

  • পরিবারের সদস্য ও প্রিয়জনদের জন্য দোয়া করা উচিত।

কবর জিয়ারত:

  • অনেক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) শবে বরাতের রাতে বাকী কবরস্থানে গিয়ে দোয়া করতেন।

সদকা ও দান:

  • এই রাতে দান-সদকা করলে আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত লাভ হয়।

উপসংহার

শবে বরাতের রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। রাসুল (সা.) শাবান মাসে অধিক রোজা রাখতেন এবং বিশেষ করে শবে বরাতের রাতে বেশি ইবাদত করতেন। এই রোজার জন্য বিশেষ কোনো কঠিন শর্ত নেই, বরং সহজভাবেই রাখা যায়। আমাদের উচিত, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি বেশি ইবাদত করা, দোয়া করা এবং পরদিন নফল রোজা পালন করা।

📌 আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে বরাতের ফজিলত লাভ করার তাওফিক দিন এবং এই বরকতময় রোজা রাখার সুযোগ দিন। আমিন! 🤲


আপনার মতামত দিন!

আপনি কি শবে বরাতের রোজা রাখেন? আপনার অনুভূতি বা পরিকল্পনা আমাদের সাথে শেয়ার করুন! 😊

FacebookX

সময় পেলেই মানেকীতে সাম্প্রতিক ও সাধারণ বিষয়ে লেখা লিখি করি

Comments (0)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top