অপারেটিং সিস্টেম (OS) কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? 

অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) হল কম্পিউটারের একটি মৌলিক সফটওয়্যার যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। এটি ব্যবহারকারী এবং কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার উপাদানগুলির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। অপারেটিং সিস্টেমের মূল কাজগুলি হল:

  1. হার্ডওয়্যার ব্যবস্থাপনা: CPU, মেমোরি, স্টোরেজ ডিভাইস, ইনপুট/আউটপুট ডিভাইস ইত্যাদির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করা।
  2. ফাইল সিস্টেম পরিচালনা: ডেটা সংরক্ষণ, সংগঠন এবং পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া।
  3. প্রোগ্রাম এক্সিকিউশন: সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলির কার্যক্রম শুরু, পরিচালনা এবং বন্ধ করা।
  4. ব্যবহারকারী ইন্টারফেস প্রদান: কমান্ড লাইন ইন্টারফেস (CLI) বা গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা।
  5. নিরাপত্তা ও এক্সেস কন্ট্রোল: ব্যবহারকারী এবং প্রোগ্রামগুলির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রদান ও তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

অপারেটিং সিস্টেমের (OS) প্রকারভেদ ও উদাহরণ:

অপারেটিং সিস্টেমকে বিভিন্ন ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে, যেমন তাদের ব্যবহার, কার্যকারিতা, এবং স্থাপত্য অনুযায়ী। প্রধানত, অপারেটিং সিস্টেমের নিম্নলিখিত প্রকারভেদ রয়েছে:

ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম (Batch Operating System):

  • বর্ণনা: এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে কাজগুলি ব্যাচে (দল) নিয়ে প্রক্রিয়াকৃত হয়, যেখানে ব্যবহারকারীদের সরাসরি ইন্টারঅ্যাকশন থাকে না।
  • উদাহরণ: প্রাচীন মেইনফ্রেম সিস্টেমগুলি ব্যাচ প্রসেসিং ব্যবহার করত।

টাইম-শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম (Time-Sharing Operating System):

  • বর্ণনা: এই অপারেটিং সিস্টেমে একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে কম্পিউটার সম্পদ ব্যবহার করতে পারে, প্রতিটি ব্যবহারকারীকে সময়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ করে।
  • উদাহরণ: UNIX, Multics

রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Real-Time Operating System – RTOS):

  • বর্ণনা: এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে নির্দিষ্ট কাজগুলি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে। এটি সাধারণত এম্বেডেড সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: VxWorks, FreeRTOS, RTLinux

ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম (Distributed Operating System):

  • বর্ণনা: একাধিক কম্পিউটারে ছড়িয়ে থাকা সম্পদগুলি একটি একক সিস্টেমের মতো কাজ করে। এটি বিভিন্ন নেটওয়ার্কেড কম্পিউটারের মধ্যে সমন্বয় ও যোগাযোগ নিশ্চিত করে।
  • উদাহরণ: Amoeba, Plan 9, Google’s Distributed Systems

নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম (Network Operating System – NOS):

  • বর্ণনা: এই অপারেটিং সিস্টেমটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলির মধ্যে সম্পদ শেয়ারিং এবং যোগাযোগের সুবিধা প্রদান করে।
  • উদাহরণ: Microsoft Windows Server, Novell NetWare

এম্বেডেড অপারেটিং সিস্টেম (Embedded Operating System):

  • বর্ণনা: ছোট ও নির্দিষ্ট কাজের জন্য ডিজাইন করা অপারেটিং সিস্টেম, যা সাধারণত এম্বেডেড ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।
  • উদাহরণ: Embedded Linux, Windows Embedded, QNX

গুরুত্বপূর্ণ ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম:

  • বর্ণনা: ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং ল্যাপটপের জন্য ডিজাইন করা অপারেটিং সিস্টেম।
  • উদাহরণ: Microsoft Windows, macOS, Linux (Ubuntu, Fedora, Debian ইত্যাদি)

মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম:

  • বর্ণনা: স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা অপারেটিং সিস্টেম।
  • উদাহরণ: Android, iOS

অপারেটিং সিস্টেমের উদাহরণ এবং বৈশিষ্ট্য:

Microsoft Windows:

  • বৈশিষ্ট্য: গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস, ব্যাপক সফটওয়্যার সমর্থন, ব্যবহারকারী-বান্ধবতা।
  • উদাহরণ: Windows 10, Windows 11

macOS:

  • বৈশিষ্ট্য: স্টেবিলিটি, নিরাপত্তা, ইন্টুইটিভ ডিজাইন, Apple হার্ডওয়্যার সহ ইন্টিগ্রেশন।
  • উদাহরণ: macOS Ventura, macOS Monterey

Linux:

  • বৈশিষ্ট্য: ওপেন সোর্স, কাস্টমাইজযোগ্য, নিরাপদ, কমিউনিটি সমর্থন।
  • উদাহরণ: Ubuntu, Fedora, Debian, CentOS

Android:

  • বৈশিষ্ট্য: ওপেন সোর্স, মোবাইল ডিভাইসের জন্য অপ্টিমাইজড, ব্যাপক অ্যাপ স্টোর সমর্থন।
  • উদাহরণ: Android 13, Android 14
  1. iOS:
  • বৈশিষ্ট্য: Apple ডিভাইসের জন্য ডিজাইন করা, নিরাপত্তা, ইন্টুইটিভ ইউজার ইন্টারফেস।
  • উদাহরণ: iOS 17, iOS 18
  1. Unix:
  • বৈশিষ্ট্য: মাল্টি-টাস্কিং, মাল্টি-ইউজার সাপোর্ট, স্থায়িত্ব।
  • উদাহরণ: AIX, HP-UX, Solaris

অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্ব:

  • সম্পদ ব্যবস্থাপনা: CPU, মেমোরি, স্টোরেজ ইত্যাদির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে।
  • প্রোগ্রাম এক্সিকিউশন: সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ব্যবহারকারী ইন্টারফেস: ব্যবহারকারীদের সাথে কম্পিউটারের যোগাযোগ সহজ করে তোলে।
  • নিরাপত্তা: ডেটা সুরক্ষা ও ব্যবহারকারীর অনুমতি নিয়ন্ত্রণ করে।
  • বহুমুখিতা: বিভিন্ন ধরণের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সাথে সমন্বয় সাধন করে।

সারসংক্ষেপ:

অপারেটিং সিস্টেম হল কম্পিউটারের প্রধান সফটওয়্যার যা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং ব্যবহারকারীদের সহজে কম্পিউটার ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করে। বিভিন্ন প্রকারের অপারেটিং সিস্টেম বিভিন্ন ব্যবহারিক প্রয়োজন এবং পরিবেশের জন্য ডিজাইন করা হয়, যা আমাদের দৈনন্দিন কম্পিউটার ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

FacebookX
kamruz
kamruz

সময় পেলেই মানেকীতে সাম্প্রতিক ও সাধারণ বিষয়ে লেখা লিখি করি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *